কিছু বই লেখা হয়, কারণ—ঘটনাক্রমে ওই বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ভাবেন তাঁর জ্ঞান সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেবেন, আবার কিছু গ্রন্থ রচিত হয় বাণিজ্যিক সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে; আবার কোনো কোনো লেখক নিজের আইডিয়াগুলো পাঠকদের সঙ্গে ভাগ করার জন্য লেখেন।
আমার কাছে এ বইটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কারণ আমি মানুষের নাম এবং চেহারা মনে রাখতে না পারার মতো সমস্যার মাঝ দিয়ে গিয়েছি। বছরের পর বছর নানান ত্রুটি-বিচ্যুতির সঙ্গে আমাকে সংগ্রাম করতে হয়েছে, মাঝে মাঝে বয়সকে দোষ দিয়েছি, অন্য সময় অন্যকিছু খোঁড়া যুক্তি তুলে ধরেছি। পরে বুঝতে পেরেছি একজন লেখক হিসেবে আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হল মনে রাখার বিষয়টি। এমন সব সময় এসেছে যখন প্রাসঙ্গিক কোনো উদ্ধৃতি বলার প্রয়োজন পড়েছে কিন্তু সঠিক শব্দগুলো মনে করতে পারিনি। আবার কখনো কোনো চেনা শব্দও পেটে আসছিল কিন্তু মুখে আসছিল না। ফলে ব্যবহার করতে পারিনি। অনেকের চেহারা স্মরণ করতে না পারায় বহুবার বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছে আমাকে।
তবে এরকম দুর্দশাময় অবস্থা কিন্তু সবসময় ছিল না। আমি ভালো ছাত্রী ছিলাম, যা পড়তাম বেশিরভাগ ঠোঁটস্থ থাকত। তখন অনেক কঠিন কঠিন প্রশ্নের জবাব মনে মনেই দিতে পারতাম। বিদেশে থাকার সময় টাকার মূল্যমান হিসেবে কোনো গড়বড় হত না। কাগজ-কলম ছাড়াই কারেন্সি কনভার্ট করতে পারতাম। নম্বরও মনে রাখতে পারতাম দারুণ। খুব কমই ফোন নম্বর লিখে রাখতাম। কাজেই বুঝতেই পারছেন এই আমি যখন আর মূল্যবান সব তথ্য মনে রাখতে পারছিলাম না তখন কেমন লাগত।
তারপর আমি নিজেকে একদিন বললাম, ‘যা হয়েছে হয়েছে। এখন সময় এসেছে। এ সমস্যার সমাধান করতে হবে, বৃদ্ধি করতে হবে আমার স্মরণশক্তি।’ এ সিদ্ধান্ত ছিল আমার জীবনের একটি টার্নিং পয়েন্ট। স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করার ওপর যত বই পেলাম লাইব্রেরিতে, সব ঘাঁটতে শুরু করলাম। মেমোরি ইমপ্রুভমেন্ট সেমিনারগুলোতে হাজির হতে লাগলাম। সেইসঙ্গে নিজেকে বিন্যাসের চেষ্টা চলল। লক্ষ করলাম এক্সপার্টরা এসব বিষয়ে যা লিখেছেন তার প্রায় সবই থোড়-বড়ি-খাড়া, খাড়া-বড়ি-থোড়।
প্রাচীন কিছু পাণ্ডুলিপিতে এ সম্পর্কে কিছু তথ্য পাওয়া গেল। জানতাম, স্মরণশক্তি বৃদ্ধি এবং দ্রæত পাঠের বিষয়ে স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন একজন এক্সপার্ট। আমি তাঁর অনেক বই পড়লাম এবং অবশেষে চলে এলাম নিজের উপসংহারে।
অবশেষে বুঝতে পারলাম যে কেউ স্বল্প চেষ্টা করলে এবং ধৈর্য থাকলে স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করতে পারবেন। স্মরণশক্তি বৃদ্ধির কলাকৌশল শেখা খুব সহজ তবে এজন্য প্রচুর প্র্যাকটিস এবং এর নিয়মিত ব্যবহার দরকার নইলে কোনো উপকারই মিলবে না।
ছাত্র হোন কিংবা নির্বাহী, গৃহকর্তা অথবা ব্যবসায়ী, ভালো স্মরণশক্তির অধিকারী হওয়া সবারই দরকার। প্রত্যেকেই ভালো স্মরণশক্তির অধিকারী হতে চায় কারণ এতে জীবনে ব্যাপক পরিবর্তন আনা সম্ভব।
এ বইটি আপনাকে আপনার স্মরণ বা স্মৃতিশক্তিতে শান দিতে সাহায্য করবে। যদি আপনি মনে করেন ভালো স্মরণশক্তির অধিকারী হতে পারলে জীবনে অনেক উন্নতি করতে পারবেন, তাহলে এ বইটি আপনার জন্য। বইটিতে যেসব আইডিয়া দেয়া হয়েছে তা অবশ্যই কাজে লাগাবেন।
অনেকে বলেন তাঁদের স্মরণশক্তি খুবই বাজে। এ নিয়ে আবার তাঁদেরকে গর্ব করতেও দেখা যায়। এটি খুবই হতাশার কথা। কেউ যদি জীবনের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো মনে রাখতে না-ই পারে তাহলে সে কী করে সুখি হবে?
তবে সুসংবাদ হল যে কেউ ভালো স্মরণশক্তির অধিকারী হতে পারবেন। এবং এটি অর্জন করা খুব বেশি কঠিন কিছুও নয়।
আমি এ বইটি লিখছি তাঁদের জন্য যাঁরা আমার মতো একই নৌকার যাত্রী। এ বইয়ের বেশিরভাগ কলাকৌশল পরীক্ষিত এবং এগুলো অনুসরণ করা কঠিন কিছুই নয়। শুধু আপনার কঠিন সদিচ্ছা থাকলেই হল। এ দক্ষতা অর্জন করার পরে আপনি আপনার প্রিয়জনদের মাঝেও এটি বিলিয়ে দিতে পারবেন।
তবে যাঁরা আত্মউন্নয়নের বই উৎসাহ নিয়ে কিনে বাড়িতে গিয়ে বুক শেলফে সাজিয়ে রাখেন এ বইটি তাঁদের জন্য নয়। একটি কথা স্মরণে রাখবেন—যে কোনো দক্ষতা অর্জনের রহস্য হল ক্রমাগত ব্যবহার এবং প্র্যাকটিস। তাই আপনাকে পরামর্শ দেব কলাকৌশলগুলো নিয়মিত প্রয়োগ করবেন এবং ছয় মাসের মধ্যে বুঝতে পারবেন আপনার স্মরণশক্তির কতটা উন্নতি ঘটেছে।
তনুশ্রী পোদ্দার
তনুশ্রী পোদ্দার
Title :
স্মার্ট মেমোরি : স্মরণশক্তি বৃদ্ধির কলাকৌশল (হার্ডকভার)