

আমি কেবল মানুষ হব
শিশুদের রঙিন দুনিয়ায় বড়রা খুব অসহায় এবং নেহায়েত বেমানান। শিশুর কাছে হলদে পাখির ছানা, মেঘলা আকাশের গুর গুর ডাক আর দিগন্ত ছুঁয়ে ফেলা সুয্যিমামা যেন এক অপার বিষ্ময়। বিলের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একলা কদমবৃক্ষ তার এক গোপন বন্ধু। বৃক্ষের কাছে সে পায় ছায়া, মায়া আর অভিযোগ করার বিস্তর ঠাঁই। কদমের গা কেটে সে লিখে রাখে সদ্যশেখা জাদুকরী বর্ণমালা। ফড়িংয়ের পেছনে ছোটা সকাল-দুপুর কত মধুময় হতে পারে, আমরা বড়রা তা বোঝার সামর্থ হারিয়ে ফেলি বহু পূর্বেই। এ কথা একবাক্যে বলা যায়; শিশুদের নিয়ে সাহিত্য রচনা করাটা অত্যন্ত স্পর্শকাতর ও শ্রমসাধ্য। অনেকটা নকশিকাঁথায় নিপুণ কারুকাজ ফুটিয়ে তোলার মতো ব্যাপার। যুগে যুগে বহু মনীষি এই কাজ করে গেছেন অত্যন্ত সযতনে। রেখে গেছেন তাঁদের অমর সৃষ্টি। এ সুকঠিন পথে পা বাড়াতে দেখি সময়ের চেনা মুখ, ছড়াকার সিরাজিয়া পারভেজকে। ‘আমি কেবল মানুষ হব’ শিরোনামে তিনি কী তুলে দিতে চান কোমলমতি শিশুদের হাতে। একি স্কুল, কোচিং, আর ভালো ফলাফলের তাগাদাপত্র? নাকি হালযুগের মোহনীয় ক্রিকেটের প্রশংসানামা? সম্প্রতি হাতে পাওয়া ছড়াগ্রন্থটি পড়তে যেয়ে হোঁচট খেতে হয়েছে নিজেকে। ‘সবাই বলেন, ফার্স্ট হওয়া চাই, নিত্য-অবিরত/ আমি কেবল মানুষ হব, মানুষ হওয়ার মতো’। বইয়ের বাকি ছড়াগুলো কেমন হতে পারে তা নিশ্চয় অনুমান করতে পেরেছেন দক্ষ পাঠককুল। তাঁর ছড়ায় শৈশব-কৈশোর, মজার ইশকুল, মাস্টার মশাই, বাংলার অপরূপ সৌন্দর্য আর মেঘের বাড়ি; এইসব উপস্থিতিগুলো খুব সরব, চনমনে। প্রতিভা প্রকাশ হতে প্রকাশিত এ ছড়াগ্রন্থের ছড়ায় হাস্যরসেরও কমতি নেই। রূপসী বাংলার মতোই রঙিন, চকচকে এর প্রতিটি পৃষ্ঠা। ‘মানবতাবাদী’ ছড়াটি পড়তে যেয়ে একটু দু:খ পেতে হয় বৈকি। এই গুজবের দেশে, গণপিটুনির দেশে মানবতা কি সত্যিই বিরাজ করে?
SIMILAR BOOKS
