সৈয়দ আবুল মকসুদকে জানতাম একজন স্বচ্ছন্দ, উৎসুক, উজ্জ্বল গদ্যলেখক হিসেবে। কিন্তু বছর তিনেক আগে একটি লিটল ম্যাগাজিনে তাঁর একটি কবিতা পড়ে চকিত হয়ে উঠি। … তিনিও যে স্বপ্নবিদ্ধ কবি, তা আর আড়াল থাকেনা যখন তিনি তাঁর কবিতাকে ‘মৎস্যকন্যা’ নামে চিহ্নিত করেন— যাকে বাস্তবের জাল ধরে রাখতে পারেনা। (‘মৎস্যকন্যা: আমার কবিতা’) অন্য একটি কবিতায় তাঁর আকাক্সক্ষার একটি প্রকাশ: ‘প্রতিটি মানুষের জীবনের অন্তত একটি প্রহর/ যেন ব্যয় হয় গাঢ় পাগল বা কবি রূপে অথবা ঈশ্বর।’ (‘কবি ও ঈশ্বর’) অর্থাৎ মানুষের কোনো-না-কোনো সময় যেতে হবে স্বাভাবিকের ঊর্ধে, প্রচলিতের ঊর্ধে। এই বইয়ের উজ্জ্বলতম অংশ প্রেমের কবিতা গুচ্ছ। প্রেম মানে বিচ্ছেদের কবিতা। অধিকাংশ প্রেমের কবির মতোই মকসুদও মূলত বিচ্ছেদের কবি। তাঁর এই প্রেমতথা বিচ্ছেদের এমন-একটি অব্যবহিত ঘনিষ্ঠ একাকী উচ্চারণ আছে যা পাঠকমাত্রকেই সশরীরে স্পর্শ করে। প্রেমবা বিচ্ছেদের জটিলতায় কবি প্রবেশ করেননি, তাঁর উচ্চারণেও আছে সরল অপরোক্ষনিবিড় উত্তাপ। .. [তাঁর] কবিতা ব্যবধানহীন আবেদনে পাঠকচিত্তকে অনায়াসে অধিকার করে। প্রেমের এই কবিতাগুচ্ছে খেলা করছে যুক্তিরিক্ত রক্তিম বন্যতা। বিচ্ছেদে আতুর কবিও এখানে তুলেধরেছেন বিচ্ছেদজয়ী প্রেমের নিশান। প্রেমের এই কবিতাগুচ্ছ পড়ে মন বলে উঠেছে, চমৎকার! জীবনের যে এক সূর্যকণা প্রেম, প্রেমের যে এক সূর্যকণা বিচ্ছেদ, বিচ্ছেদের যে এক সূর্যকণা কবিতা সৈয়দ আবুল মকসুদ তা সাক্ষরিত করে রাখলেন। ‘আবদুল মান্নান সৈয়দ, দৈনিক সংবাদ, সাহিত্য সাময়িকী।’