হরবোলা
#বুকরিভিউ হরবোলা- দিবাকর দাস। পাহাড়ে বেশ অনেক বছর ধরে ত্রাসের আজত্ব কায়েম করেছে আতঙ্কবাদী বিজন সাহু। শান্তিরক্ষী মিলিটারিকে বারবার ঘোল খাওয়ানোর পর এবার সে ভাবলো, যাই... ঢাকা শহর কব্জা করি গিয়ে। পাহাড়ি সাগরেদ ছাড়াও ক্রমে সঙ্গে জুটেছে বাঙালি এক ছোকরা। ছেলেটাকে দেখে মন হুহু করে উঠল সাহুর। হয়তো খুঁজে পেয়েছে নিজের উত্তরাধিকার। সিক্রেট সার্ভিস এজেন্ট মাহতাবের ক্যারিয়ার আপাতদৃষ্টিতে খুব একটা সমৃদ্ধ নয়। আগের তিনটা অপারেশন ব্যর্থ, গুলিও খেতে হয়েছে গুনে গুনে একটা করে প্রতিবার... এবার চীফ সুধীর দত্ত কাঁধে চাপালেন নতুন কেস- খুঁজে বের করতে হবে ঢাকার ড্রাগসের ব্যবসায় নতুন আমদানি কারা। সহকারি হিসেবে সাথে জুটেছে সিনিয়র তিনজন, যারা বসকে খুব একটা পাত্তা দেয়ার তালে নেই... এবং দুই জুনিয়র, এরা তাকে পাত্তা দিলেও নিজেদের ঘটে নেই অভিজ্ঞতা। কাজে নেমে মাহতাবের অকুল পাথারে পড়ার অবস্থা। কোন দিক থেকে আসছে না সূত্র, সিনিয়রদের পাশাপাশি জুনিয়র এজেন্টরাও মাথা কুটে মরছে বন্ধ দরজায়। চোখের সামনে অবস্থা যা দেখা যাচ্ছে, আদৌ কি তাই? নাকি ফাটার অপেক্ষায় পেছনে সুপ্ত আছে অন্য কোন বোমা? কাহিনী সংক্ষেপ বড় করে ফেললাম নাকি? হলে হয়েছে। কথা হচ্ছে, চোখে পড়েছে বইটাকে স্পাই বা এসপিওনাজ থ্রিলার বলে উল্লেখ করেছেন কেউ কেউ। স্বয়ং লেখকও কোন পোস্টে এই কাজ করে থাকতে পারেন হয়তো। কিন্তু আগাগোড়া পড়ার পর আমার মনে হয়, কাহিনীটা স্পাই বা এসপিওনাজের বদলে ক্রাইম থ্রিলার বললে বেশি মানানসই হয়। ব্যক্তিগত মত হিসেবে আমি তর্কে যাব না... এসপিওনাজ ধারায় ফেলার জন্য এখানে যে কাজগুলো আর্মির স্পেশালাইজড সিক্রেট এজেন্সি দিয়ে করানো হয়েছে তা পুলিশের গোয়েন্দা দিয়েও করানো যেত। এবার আসি বর্ণনার দিকে। দিবাকর দাসের দুয়েকটা বই আগে পড়া থাকায় লেখা নিয়ে সন্দেহ ছিল না। এই ধাঁচের যে কোন লেখাকে মজাদার করার ওপেন সিক্রেট একটা ব্যাপার হচ্ছে চায়ে দেয়া চিনির মতো মাপা হিউমার। কম দিলে জোশ আসে না(মানে আমার মতো পাঠকের জন্য আর কি), আবার বেশি দিলে হয়ে যাবে শরবত। এক্ষেত্রে লেখক সিদ্ধহস্ত। পারফেক্ট। প্লটের বিচারে খুব একটা এক্সট্রা-অর্ডিনারি কিছু ছিল না, কিন্তু উপস্থাপনার দিক থেকেই যে সাধারণকে অসাধারণ করে তুলতে হবে- এক্ষেত্রে লেখক সফল হয়েছেন আমার মতে। পাশাপাশি দুই টাইমলাইনে ঘটনাপ্রবাহ এগিয়েছে। বর্তমানে মাহতাবের অ্যাসাইনমেন্ট ইস্যু হওয়ার সময়ের তুলনায় পাহাড়ে বিজন সাহুর মিলিটারিদের ঘোল খাওয়ানোর সিনগুলো কয়েক বছর আগেকার। ব্যাপারটা পড়ে বুঝতে হয়েছে আমার। লেখক এক্ষেত্রে চ্যাপ্টারের শুরুতে ব্যাপারটা উল্লেখ করলে ভালো লাগত। এই ধরণের খুঁটিনাটি পড়ার মজা কয়েক ধাপ বাড়িয়ে দেয়। সুস্বাদু লেখনশৈলির কারণে দুই তরফের ঘটনাই উপভোগ করেছি। মাপা অ্যাকশন ছিল কিছু জায়গায়, আর শেষদিকে টুইস্টগুলোও ছিল মোটামুটি আনপ্রেডিক্টেবল। সব মিলিয়ে আমি সন্তুষ্ট। আর স্পয়লার ফ্রি রিভিউ বলে চোখে লাগা দুয়েকটা বিষয় এড়িয়ে যাচ্ছি। মেজর কোন ইস্যু না। সম্ভবত লেখক ইতিমধ্যে এই ব্যাপারে অবগত হয়েছেন। সজল চৌধুরীর প্রচ্ছদ গল্পের সাথে মানানসই, তবে চার দিকের সাদা বর্ডারের কারণে আমার কাছে ভালো লাগেনি। সাধারণত এমন বর্ডার প্রিন্ট এবং কাটিং-এর সময় মাপে চুল পরিমাণ হেরফের হলেই বিরক্তির উদ্রেক করে। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। বানান ভুল বা কোন অসঙ্গতি চোখে পড়েনি। ভূমিপ্রকাশের প্রোডাকশনের মান দিনকে দিন উন্নতির দিকে যাচ্ছে। তাদের জন্য শুভকামনা রইলো। মারকাটারি থ্রিলার যদি চান তাহলে বলব, এই বই সেই চাহিদা পূরণ করবে না। মাথা ঘোরানো অ্যাকশন বা সুপারহিরো মার্কা এজেন্টও নেই এখানে। তবে পারফেক্ট ক্রাইম ফিকশন পছন্দ এমন পাঠকদের রিকমেন্ড করব 'হরবোলা'। ভালো লাগবে আশা করি। এক নজরে, হরবোলা- দিবাকর দাস জনরাঃ ক্রাইম থ্রিলার, এসপিওনাজ(!) প্রচ্ছদঃ সজল চৌধুরী ভূমিপ্রকাশ, বইমেলা ২০২০ পৃষ্ঠাঃ ১৬০, লিখিত মূল্যঃ ২৪০