শ্বশুরবাড়ি থেকে একটা সুতাও না পাওয়ার ক্ষোভ মনে নিয়ে হোসেন আরার সাথে সংসার শুরু হয় মেছের আলির। মেছের আলি জানেন না এই সংসারে তিনি কতটা সংসারী হতে পারবেন! হোসেনে আরার সাথে নিজেকে কতটা মানিয়ে নিতে পারবেন! জানেন না দু'জন সুখেদুঃখে কতটা এক হয়ে থাকতে পারবেন!
বিয়ের পর থেকেই আমেনা বেগম খোয়াব আলিকে ভালোভাবে কাছে পান নি। স্বামীর প্রতি স্ত্রীর যে অধিকার সে অধিকার তো দূরের কথা কখনো কোনো আবদারও করতে পারেন নি। অবশ্য আবদার করার সময়টুকুই তিনি পান নি। পাবেনই বা কেমন করে! খোয়াব আলি যেমন দিনে ছিলেন তার দৃষ্টির বাইরে, রাতেও তেমনই। কিন্তু কেনো!
খবির আলিকে বিয়ের কথা বললেই সে এড়িয়ে যায়, ঘর থেকে বের হয়ে যায়। কে জানে কোথায় যায়! পাড়ায় পাড়ায় ঘুরেফিরে দিন কাবার করে সন্ধ্যায় ঘরে ফিরে। কিন্তু এরই মাঝে সে প্রেমে পড়ে। প্রেমে পড়ার পর ভাবে, সে তার প্রেমে পড়া মানুষটিকেই বিয়ে করবে। যদি তা না পারে তাহলে কখনো বিয়েই করবে না খবির আলী। শেষ পর্যন্ত কী সে পেরেছিলো তার প্রেমে পড়া মানুষটিকে বিয়ে করতে!
খসরু আলির বয়স যখন ছয় তখন সে ঘর ছেড়ে পালিয়ে যায় সৎ মায়ের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে। পালানোর সময় তার খুব মনে পড়ছিলো বাবার কথা। কিন্তু তার বাবা তখন অনেক দূরে। বাবার দেখা পাওয়া সম্ভব না। যাওয়ার সময় খসরু আলী শুধু ভাবে, তবু বাবা ভালো থাকুক, তার সংসার টিকে থাকুক। কিন্তু খসরু আলি কোথায় যায় পালিয়ে! কোথায় খুঁজে পায় তার আশ্রয়!
হাশেম খাঁ কখনো তার বাবাকে দেখে নি। সে জানে না বাবারা দেখতে কেমন হয়! শুধু এটুকুই জানে বাবারা দেখতে নানাদের মতো হয়। কারণ তার জীবনের ছয়টি বছর কেটে গেছে নানার কাছে থেকে, নানার আদর পেয়ে, নানাকে দেখে। মায়ের কাছেও তেমন যায় না সে। কেননা তার মা যে কথা বলতে পারে না, বোবা। হাশেম খাঁ তাই তার নানার কাছেই সবকিছু আবদার করে। নানা তার সাধ্যমতো তা মেটানোর চেষ্টা করে। যদিও কখনো মেটাতে না পারে তখন তার মরে যেতে ইচ্ছে করে। কিন্তু তাও পারে না শুধুমাত্র এই নাতিটার কথা, এই হাশেম খাঁ'র কথা চিন্তা করে। কেননা তিনি ছাড়া যে হাশেম খাঁ'র কেউ নেই। তিনি মরে গেলে সে যাবে কোথায়! জগতের কোথায় গিয়ে খুঁজে পাবে মমতায় মোড়ানো শান্তিময় আশ্রয়!