পড়তে গিয়ে বাকরুদ্ধ হয়েছি, শ্রদ্ধায় অবনত হয়েছি বারবার। লিখতে গিয়ে হাজার বার ভিজে গেছে চোখ। আমাদের শিশু-কিশােররা, আমাদের সােনার ছেলেরা মুক্তিযােদ্ধাদের একটা বড় অংশ তারাই ছিল। বলা যায় মােট মুক্তিযােদ্ধাদের অর্ধেকেরও বেশি ছিল তারা, যাদের বয়স ১৪ হতে ২২ বছরের মধ্যে। বয়সটা যখন মায়ের হাতের দুধ মাখা ভাত খাওয়ার সময়, দাদুর কোলে বসে রূপকথার গল্প শােনার সময়, তখনই শক্ত হাতে কাঁধে তুলে নিয়েছে দেশমাতাকে রক্ষা করার অস্ত্র। মায়ের অতি-আদরের ছেলে-ফুলের টোকাও পড়েনি যার গায়ে, বুলেটের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়েছে তারই শরীর। একলা অন্ধকারে ঘুমাতে যে ভয় পেত, ঘুটঘুটে কালাে আঁধারের রাতে ভারী অস্ত্রের বােঝা বয়ে সে-ই পাড়ি দিয়েছে অজানা-অচেনা পথ নদী জলাশয় লােকালয়। তাদেরই জীবন আর পবিত্র রক্তের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীন সােনার বাংলাদেশ, আমার বেঁচে থাকা অধিকার, মাতৃভাষার অঙ্গীকার। প্রতিদিনের সূর্য ওঠা। বিজয়দীপ্ত নতুন ভােরের মতাে অঙ্গীকার আমাদের উৎসর্গীকৃত এই কচি প্রাণগুলাের প্রার্থনা যেন কখনােই ব্যর্থ না হয়। তাদের না-বলা কথা যত ভাষা পাক প্রজন্ম হতে প্রজন্মের সকল কথায়, অদেখা স্বপ্ন যত ফুল হয়ে ফুটুক সােনাঝরা আগামীর সবগুলাে রংবাহারি বসন্ত দিনে। | আমার দীর্ঘ সময়ের একনিষ্ঠ সাধনায় চেষ্টা করেছি সব কিশাের মুক্তিযােদ্ধার নামগুলাে সংগ্রহ করতে। পৃথিবীর প্রথম থেকে শেষ দিনটিকে তাদের কথা জানাতে। জানি কিছুই পারিনি আমি
লে. কর্নেল ডা. নাজমা বেগম নাজু
পেশায় মিলিটারি চিকিৎসক তিনি। জাতিসংঘ ইতিহাসের প্রথম নারী কন্টিনজেন্ট (লেভেল-টু হাসপাতাল) কমান্ডার, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইতিহাসে প্রথম নারী ফিল্ড অ্যাম্বুলেন্স কমান্ডার এবং প্রথম নারী অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর মেডিকেল সার্ভিসেস। তার সবচেয়ে বড় পরিচয় একজন সফল কথাসাহিত্যিক তিনি। সাহিত্যের সবগুলাে শাখায় অসংখ্য প্রকাশ রয়েছে তার। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, ভ্রমণ কাহিনি, কিশাের উপন্যাস, শিশুতােষ গ্রন্থ, স্বাস্থ্যবিষয়ক বই, রান্না ও পুষ্টির বই সব ক্ষেত্রেই রয়েছে তার উজ্জ্বল উপস্থিতি পেয়েছেন একাধিক সম্মাননা ও পুরস্কার। ডক্টর মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ পদক, মাদার তেরেসা পদক, জাতীয় মানবাধিকার পদক, লেখক সাংবাদিক ঐক্য ফাউন্ডেশন পদক, স্বাধীনতা পদক, জগজিৎ সিং পদক, বেগম সুফিয়া কামাল পদক, নীলফামারী বার্তা পদক, সেনা পারদর্শিতা পদক, রংপুর মেডিকেল কলেজ দিবস পদক, তার মাঝে উল্লেখযােগ্য। জাতিসংঘের ইতিহাসে উল্লেখযােগ্য অবদান রাখায় তিনি অর্জন করেছেন ফোর্স কমান্ডারস কমেন্ডেশন, ২ অ্যাওয়ার্ড ফর ডিঠিংগুইশড সার্ভিসেস এবং নমিনেশন ফর মিলিটারি জেতার অ্যাডভােকেট অ্যাওয়ার্ড অব দ্য ইয়ার ২০১৬। বর্তমানে তিনি ২য় বারের মতো কন্টিনজেন্ট। কমান্ডার হিসাবে সেন্ট্রাল আফ্রিকায় কর্মরত রয়েছেন। উল্লেখ্য সেখানে কালি সিনিয়রের পদ অলংকৃত করছেন, তিনি একজন মেডিকেল কমান্ডারের জন্য যা একটি বিরল দৃষ্টান্ত।