মোস্তাকের প্রবণতা নয় শব্দক্রীড়া। তবু কখনও কখনও আপাত-সাধারণ কোনো শব্দকেও তিনি বিশেষ অনুরণনময় অনুভব-পরম্পরার উৎসে রূপান্তরিত করেছেন। এই প্রক্রিয়ায় সমস্ত পূর্বধার্য আকরণ ধ্বস্ত করে দিতে চান তিনি। ফলে অভ্যস্ত শব্দসম্বন্ধ চৌচির হয়ে গিয়ে কবির বিপুল চারণভ‚মি জেগে ওঠে। তপোধীর ভট্টাচার্য ‘সংকেতের লিপিমালা যখন অফুরান ঝরনা’, কবিতার বহুস্বর, ২০০৯ যারা সা¤প্রতিক বাংলা কবিতার হাল-হকিকত সম্পর্কে অবহিত, তাদের কাছে এই নিভৃতিচারী, মৃদুস্বরের কবি ইতোমধ্যে আপন মনন-মুদ্রা প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। কথা ও হাড়ের বেদনা সংকলনেই ঘোষিত হয়েছিল চিহ্নসন্ধানী কবির আবির্ভাব। ভিখিরিও রাজস্থানে যায় সংকলনের কবিতাগুলিতে দেখি, আপন নিভৃত সত্তার সঙ্গে আলাপন অব্যাহত রয়েছে তাঁর। মনে হয় যেন কবিতার বাচন অনন্ত পরিসর থেকে জেগে উঠছে এবং আত্মগত দ্বিরালাপে মগ্ন হয়ে আবারও মিলিয়ে যাচ্ছে অনন্তে।চাইলেই তাই ভিন্ন পথ ভিন্ন সুর ধরা যায় না। কিন্তু ধরা যে যায় গোনাগুনতিতে তারও দৃষ্টান্ত রয়েছে। তাই একটু সাধু বাংলায় বলতে চাইলে মরীচিকাময়, সূ² ইঙ্গিতবহুল, পিচ্ছিল ও বক্র এই চক্ষুভাষায়, ইন্দ্রিয় দিয়ে ধরা যায় না এমন এই ভাষারেখায় পৌঁছোনোর প্ররোচনাকে নীরব চ্যালেঞ্জে গ্রহণের বাসনায় কেউ কেউ সক্রিয় থাকেন। চেনা, কম চেনা, অচেনা, কম ব্যবহৃত শব্দ ব্যবহার করে অপেক্ষাকৃত ন¤্র স্বরে, মাঝে মাঝে সূ² ব্যঙ্গ বা পরিহাসের মোচড় রেখে, সমসাময়িক জীবনকে, প্রতিবেশকে দেখে, বুঝে, কিছু লোক অনুষঙ্গ, দেহ বিষয়ক ভাবনা-চিন্তা সবকিছু মিলে একটি মর্মবস্তুর উপস্থাপনার দূরযাত্রা, মনে হয়, মোস্তাক আহমাদ দীনের। জাফর আহমদ রাশেদ, ‘বিরতিময় ঘাই’, প্রথম আলো, ১৫ জুন ২০০১