চিন্তার সংকট আমাদের কালের সর্বপ্রধান সমস্যা। সমাজের সর্বস্তরের মানুষ আজ দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। চিন্তা বা সুচিন্তা বলে কিছু আজ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দুশ্চিন্তার দুটো কারণ খুব সহজেই চোখে পড়ে। পৃথিবীর জলবায়ুর উষ্ণতা আর পরিবেশদূষণ একদিকে। প্রকৃতিকে মানুষ যেভাবে ক্ষুব্ধ করে তুলছে, প্রকৃতি এর প্রতিশােধ নিতে চাইছে। আর-এক দিকে মানুষ তৈরি করছে সভ্যতা ধ্বংসের হাতিয়ার। পারমাণবিক অস্ত্রের মুখে যুদ্ধের ময়দান প্রতিদিন কেঁপে উঠছে। এরই মধ্যে সভ্যতার অমূল্য সম্পদ ধ্বংস করেছে এই অস্ত্র। এ ধ্বংসের চেয়েও বড় ধ্বংস হচ্ছে, হিংসায় মানুষের মন বিষাক্ত করে তুলেছে অস্ত্র। আর্থিক বৈষম্যের সমস্যাও প্রকট আকার নিচ্ছে। সব কিছুর কেন্দ্রে মানুষ। কেউ ক্ষমতাবান, কেউ ক্ষমতাহীন। ক্ষমতাহীনের ক্ষমতাকে ক্ষুদ্র করে দেখার মধ্যেই ক্ষমতাবানের প্রকৃত দুর্বলতা। আর সেটাই মানবসভ্যতা ধ্বংসের বড় কারণ। এইসব সংকট নিয়ে অসাধারণ মানুষের মধ্যে দুশ্চিন্তার অন্ত নেই। সাধারণ মানুষের দুশ্চিন্তা অন্যরকম। খাওয়া-পরার দুশ্চিন্তা অনেকটা কমে এলেও এঁদের জীবনে নেই নিরাপত্তা, নেই ন্যায্য বলার স্বাধীনতা। এই দুই মৌল পথ বন্ধ হওয়ায় মনস্তাত্ত্বিকভাবে মানুষ আজ অর্ধেক পাগল হয়ে গেছে। এই পাগলের নাম দেওয়া হয়েছে—মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ, আইএস প্রভৃতি। এই আঙ্গিকের নির্বাচন সবলের, দুর্বলের নয়, অর্থাৎ সবলের তৈরি করা এই অভিধা। দুর্বলেরও আছে ন্যায়সঙ্গত অধিকার। সে অধিকার সবল কোনােদিনই স্বীকার করেনি। দ্বন্দ্ব তাই নিয়ে। সাধারণ মানুষ বড় নিরুপায়, বড় দিশেহারা, বড় ভয়ার্ত। শক্তিমান ক্ষমতার মােহে অন্ধ।
কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সাধারণ মানুষ অসহায়। টাকাওয়ালা, বড় ব্যবসায়ী, মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত বড় অস্থির, ব্যস্ত, ভােগাৰ্ত। আত্মপরতায় নিমগ্ন এই শ্রেণীর একটা বড় অংশ, নারী-পুরুষ দুইই, পারে তাে চব্বিশ ঘণ্টা কানে এয়ারফোন ঝুলিয়ে রাখতে চাইছে।
মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম
মুহম্মদ সাইফুল ইসলাম-এর জন্ম কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী থানায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি (২০০৯)। কর্মজীবনের শুরুতে কিছুকাল বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের গ্রন্থাগারিকের দায়িত্বে। নিয়ােজিত ছিলেন। পরে বাংলাদেশ এশিয়াটিক সােসাইটি কর্তৃক সম্পাদিত ও প্রকাশিত জাতীয় কোষগ্রন্থ বাংলাপিডিয়ার সহকারী সম্পাদক। বাংলা একাডেমির সহকারী পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন পাঁচ বছর। বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ও সম্পাদিত বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধান-এর অন্যতম সংকলক এবং সমন্বয়কারী। বর্তমানে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলাের বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় তাঁর সম্পাদিত গ্রন্থের সংখ্যা দশ। সমাজ, সংস্কৃতি, শিক্ষা, সাহিত্য ও দর্শনমূলক ভাবনা গ্রন্থগুলাের বিষয়। তার এক উল্লেখযােগ্য মৌলিক কাজ—অক্ষয়কুমার দত্ত ও উনিশ শতকের বাঙলা (২০০৯)।