আমি একটু একটু ছবি আঁকতে পারি। কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাং আঁকতে পারি না। কাকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাং আঁকা কঠিন। খুবই কঠিন। লম্বা লম্বা টান দিয়ে, টানের মাথায় তিনটি করে কাঠি বসিয়ে দিলেই হলো না। কাকের ঠ্যাং কাকের ঠ্যাঙের মতো। বকের ঠ্যাং বকের ঠ্যাঙের মতো। অত কঠিন জিনিস আঁকা যায় নাকি?
আমি আঁকতে পারি ঘর।
আমি আঁকতে পারি গাড়ি।
আমি আঁকতে পারি মেঘ।
আরও অনেক কিছুই পারি।
কথা সেসব না।
কথা হলো কয়েক বছর আগে আমি একটা বাসাতে থাকতাম। চারতলার বাসা। একা থাকতাম। সেই বাসায় একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি, এ কী রে! আমার ঘরের দেয়ালে এই ছবি কে এঁকে রেখেছে?
কী ছবি রে!
নয়ন জুড়ায়।
পরদিন সকালে দেখি আরেকটা।
পরদিন সকালে দেখি আরেকটা।
পরদিনও।
এত সুন্দর ছবি কে আঁকে?
রোটার পর আঁকে।
রাত বারোটার পর আমি ঘুমিয়ে পড়ি তো।
সে শুধু ছবি এঁকে চলে যায়।
কে?
কে? কে? কে?
একদিন রাত বারোটা বাজল।
আমি না ঘুমিয়ে মটকা মেরে থাকলাম। এ মা! রাত্র বারোটা বারো মিনিটে দেখি ছোট্ট এক প্রজাপতিনী। প্রজাপতিনী ছাড়া আর কী বলব? এমন মিষ্টি ছোট্ট মেয়ে আর দেখিনি।
আমি বললাম, ‘কে গো তুমি?’
মাত্র ছবি আঁকতে নিচ্ছিল। চমকে তাকাল প্রজাপতিনী।
হেসে দিয়ে বলল, ‘তুমি ঘুমাওনি?’
‘না তো।’
‘ভালো করোনি। আমি রঙ।’
বলে এমা! অদৃশ্য হয়ে গেল ছোট্ট মিষ্টি প্রজাপতিনী।
তার নাম কি রঙ ছিল নাকি
ভালো।
আমি আর কখনো রঙকে দেখিনি।
সেই বাসাও ভেঙে ফেলেছে। রঙের আঁকা ছবিগুলোও বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। ভালো যে আমার ফটোগ্রাফার বন্ধু কিডো সেই ছবিগুলোর কিছু তুলে রেখেছিল। সেই ছবিগুলোই দিয়ে দিলাম এখানে। রঙ সেই ছোট্ট প্রজাপতিনী, যদি দেখেন!
ধ্রুব এষ
জন্ম : ১৯৬৭
মা: লীলা এষ
বাবা : ভূপতিরঞ্জন এষ
দশ হাজারের বেশি বইয়ের প্রচ্ছদ করেছেন পাশাপাশি লিখছেন। লিখতে পছন্দ করেন রহস্য কাহিনি, আদর্শ মানেন এডগার এলান পাে-কে। এ পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৪১। যতদিন পারেন প্রচ্ছদ করবেন এবং লিখবেন।