ফ্ল্যাপে লিখা কথা: সংশপ্তক উপন্যাসের কাহিনির শুরু ইংরেজ আমলের অন্তিমকালে, শেষ পাকিস্তান আমলের সূচনাপর্বে ।কাহিনির অনেকখানি স্থাপিত পূর্ববঙ্গের গ্রামাঞ্চলে,খানিকটা কলকাতা ও ঢাকায়। এর বৃহত্তর পটভূমিতে আছে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ ,মন্বন্তর ,পাকিস্তান আন্দোলন , সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার ঘটনা। এতে প্রধান্য ভাল করেছে শাখা প্রশাখাসমেত এক সৈয়দ পরিবারের কথা। তার এক সৈয়দ প্রাচীন পন্থী নান সংস্কারের সঙ্গে ইংরেজি শিক্ষা ও ইংরেজের চাকরি সমন্বিত করেছেন। আরেক সৈয়দ স্ত্রী-কন্যা ফেলে নিরুদ্দেশযাত্রা করে দরবেশ হয়েছেন। প্রথমোক্তজনের পুত্র জাহেদ আধুনিক শিক্ষা জীবন বোধ আয়ত্ত করে প্রথমে পাকিস্তান-আন্দোলন এবং বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। প্রাচীনতার সঙ্গে তার ভয়াবহ দ্বন্দ্ব। তাই পিতৃব্য যখন তাঁর এক বয়স্ক শিষ্যের সঙ্গে কন্যা রাবুর বিয়ে দিয়ে ফেলেন, তখন সে তার সমর্থদের নিয়ে নতুন বরের ওপর এমন হামলা করে যে শুধু জামাতা নন, সদলবলে শ্বশুরকেও পলায়ন করতে হয়। রাবুও এ ঘটনাকে বাড়াবাড়ি মনে করে, কিন্তু পরে-জাহেদের শিক্ষার প্রভাবে-ওই স্বামীকে স্বামিত্বের অধিকার দিতে অস্বীকার করে। কাহিনির শেষ হয় বাম রাজনীতিতে সংশ্লিষ্টতার কারণে জাহেদের গ্রেফতারে এবং তার প্রতি রাবুর দেহাতীত প্রেমের স্থিতিতে।
শহীদুল্লা কায়সার
শহীদুল্লা কায়সার জন্ম ১৬ ফেব্রুয়ারি ফেনী জেলার মজুপুর গ্রামে। পিতা: মাওলানা মােহাম্মদ হাবিবুল্লা, মাতা: সৈয়দা সুফিয়া খাতুন। ১৯৪৬ সালে কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর শ্রেণীতে ভর্তি হলেও রাজনৈতিক কারনে অসমাপ্ত। পেশায় সাংবাদিক। সক্রিয় ছিলেন বামপন্থী রাজনীতিতে। একাধিকবার কারাবরণের সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। তাঁর উল্লেখযােগ্য সৃষ্টি ‘সংশপ্তক’ ‘রাজবন্দীর রােজনামচা’ ‘কৃষ্ণচূড়া মেঘ’ ‘দিগন্তে ফুলের আগুন’ ‘গল্পসমগ্র’ ‘উপন্যাসসমগ্র-১ ‘উপন্যাসসমগ্র-২' প্রভৃতি। সাহিত্যের জন্য পেয়েছেন আদমজী সাহিত্য পুরস্কার (১৯৬৩) ও বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬৯)। স্ত্রী পান্না কায়সার, কন্যা শমী কায়সার ও পুত্র অমিতাভ কায়সার। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসরদের দ্বারা ধৃত হন এবং তাঁর খোঁজ আজও পাওয়া যায় নি।